স্বদেশ ডেস্ক: বগুড়ায় সম্প্রতি মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে করা একটি মামলার আসামিরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনপ্রাপ্তির জাল আদেশ তৈরি করে নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। জাল-জামিনের বিষয়টি গতকাল সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের নজরে এনেছেন। এর পর আদালত আসামিদের জামিন বাতিল করে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে বগুড়া সদর থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের আদেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, জাল জামিন আদেশে ৩০ আসামির নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম আমিনুল ইসলাম। তিনি বগুড়া সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
আদালত জাল-জামিনে উল্লেখিত আসামিদের গ্রেপ্তারের পর বগুড়ার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিজেএম) আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ওই জাল আদেশ বানানোর সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সিজেএমের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদেশ বাস্তবায়ন করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।
জাল আদেশের কপিতে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেনÑ যুবলীগ নেতা সদরের নিশিন্দ্রা গ্রামের আমিনুল ইসলাম, তার ভাই মো. আলিম ও মো. আনোয়ার ম-ল, বগুড়া সদরের মো. লিটন প্রাং, মো. বাদল (ভ্যানগাড়ি), মো. সেলিম, মো. মানিক, মো. জাকির, মো. তানভীর, মো. কিবরিয়া, মো. গণি, মো. হালাল, মো. রাসেল ম-ল, মো. রাশেদুল, মো. সাদ্দাম, মাহমুদ, রুহুল আমিন, মো. জাহিদুর রহমান জাদু, আসাদুজ্জামান মনা ওরফে সাহিকুজ্জামান, নুর আলম ম-ল, বিপুল, খোকন ওরফে মো. গোলাম রফিক, শিপন, আল মামুন ওরফে মো. মাহবুব রহমান, মিরাজ, মো. সুমন প্রামাণিক, মিনহাজ আহমেদ ওরফে দীপ্ত, রাজীব, রতন এবং
সেলিম রেজা।
জাল আদেশে আমিনুল ইসলাম এবং তার ভাই মো. আলিমসহ ৩০ আসামি ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন বলে উল্লেখ আছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই জামিন দিয়েছেন। গতকাল উচ্চ আদালতের এই জাল আদেশ সৃজনের বিষয়টি ধরা পড়েছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলকে কেন্দ্র করে বগুড়া শহরের চারমাথা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মোটর মালিক গ্রুপের একটি অংশ চারমাথায় অবস্থিত গ্রুপের কার্যালয়টি দখল করতে যায়। এ সময় আরেকটি গ্রুপের সদস্যরা বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তিনটি বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া চারমাথা পেট্রল পাম্প, নাভানা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
এ ঘটনায় দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের করা মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আমিনুলসহ ৩০ জনের নাম রয়েছে জাল জামিনের আদেশে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) সামিরা তারান্নুম রাবেয়া আমাদের সময়কে বলেন, মোশন শুনানির মাধ্যমে এ আগাম জামিন হয়েছে বলে জাল আদেশে উল্লেখ ছিল। কিন্তু গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই কোর্টে কোনো মোশন শুনানি হয়নি। এ ছাড়া এ বেঞ্চ এখতিয়ার পাওয়ার পর থেকে কোনো দিনই আগাম জামিনের শুনানি করেননি। জাল আদেশের কপিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যার নাম রয়েছে, তিনি ২০১৯ সালেই রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া আদেশের কপিতে টাইপিস্ট (মুদ্রাক্ষরিক) হিসেবে নাম আছে জি. মোক্তাদিরের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সেকশনে জি. মোক্তাদির নামে কেউই নেই। এ ছাড়া জাল আদেশে ফৌজদারি বিবিধ মোকাদ্দমার নম্বর ৪০৫৪২/২১। কিন্তু যেদিন আদেশ হয়েছে, সেদিন পর্যন্ত হাইকোর্টের ফৌজদারি বিবিধ মোকাদ্দমার সংখ্যা সাত হাজারের কিছু বেশি ছিল। বিষয়গুলো আদালতে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট সেকশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এদিন ডেকে পাঠান আদালত। সবার বক্তব্য শোনার পর আদালত জাল আদেশে যাদের নাম আছে, তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তদন্ত করে জালিয়াতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে এবং হাইকোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বগুড়ার সিজেএমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএজি আরও বলেন, আদালত একটি বার্তা পৌঁছতে চান যে, কেউ যেন অবৈধ উপায়ে, পয়সা দিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিচারকর্মকে ভূলুণ্ঠিত করতে না পারে।